নিশীথ দাস, টিভি ২০ বাংলা :
অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পেয়েছে ইডি। এখনও পর্যন্ত ২০ কোটি টাকা গোনা হয়েছে। তবে আরও টাকা রয়েছে। টাকা গোনার কাজ চলছে জোরকদমে।
ইডি সূত্রের খবর, নগদ টাকা ছাড়াও বিপুল সোনার বাট পাওয়া গিয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে। বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে বুধবার তালা ভেঙে ঢুকেছে ইডি। তারপর এই টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
৪টি নোট গোনার যন্ত্র দিয়ে চলছে জোরকদমে টাকা গোনা। ইডি সূত্রে খবর, প্রথম রাউন্ডে ১৫ কোটি টাকা গোনা সম্ভব হয়। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই আরও ৫ কোটি টাকা গোনা হয় বলে খবর পাওয়া যায়। ফলে এখনও পর্যন্ত ২০ কোটি টাকা গুনতে পারলেন ব্যাঙ্ককর্মীরা। এ ছাড়াও পাওয়া গিয়েছে তিন কেজির মত সোনার বাট। যার বাজারমূল্য কয়েক কোটি টাকা হতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। উদ্ধার হয়েছে কিছু রৌপ্যমুদ্রাও। বেশ কিছু দলিলও পাওয়া গিয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। টাকা গুনতে রাত পেরিয়ে যেতে পারে বলে অনুমান করছে ইডি ৷
রাত দশটা পর্যন্ত খবর, নগদ টাকার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ সোনার গয়না উদ্ধার হয়েছে। যার ওজন কমবেশি তিন কেজি বলে খবর। সেইসঙ্গে বেশ কিছু রুপোর কয়েনও মিলেছে ক্লাব টাউনের বিলাসবহুল আবাসন থেকে।
প্রসঙ্গত, রাত পৌনে দশটার খবর নোট গণনা শেষ হয়নি। ফলে টাকার অঙ্ক আরও বাড়তে পারে। যেমন ডায়মন্ড সিটিতে প্রথমে জানা গিয়েছিল কুড়ি কোটি। তারপর তা গুণতে গুণতে গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় বাইশ কোটিতে।
ডায়মন্ড সিটির ফ্ল্যাটেও প্রায় আশি লক্ষ টাকার গয়না মিলেছিল। তবে অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে সোনার পরিমাণ আরও বেশি বলে জানা যাচ্ছে ইডি সূত্রে। তবে ডায়মন্ড সিটির মতো বেলঘরিয়াতেও বিদেশি মুদ্রা রয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয় এখনও।
স্থানীয় প্রতিবেশীদের সূত্রে খবর, বেলঘরিয়ার এই ফ্ল্যাটে নিয়মিত যাতায়াত ছিল অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের। সাত দিন আগেও তিনি এসেছিলেন। জানা গিয়েছে, এই আবাসনে মোট দুটি আলাদা ফ্ল্যাট রয়েছে অর্পিতার। একটি ব্লক ৫-এ, একটি ব্লক-২-এ। ব্লক ৫-এর (৮-এ) ফ্ল্যাটে আপাতত তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি।
এই ফ্ল্যাটের আয়তন প্রায় ১৫০০ বর্গফুট। অন্য ফ্ল্যাটটি আয়তনে ছোট, ১৩৮০ বর্গফুট। এখানে গড়ে ফ্ল্যাটের দাম প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে দুটি ফ্ল্যাটের আইননানুগ মালিকানা পেতে হয়ত ২ কোটির কাছাকাছি খরচ করতে হয়েছিল অর্পিতাকে। কিন্তু শোনা যায়, সেই অর্পিতাই দিতেন না আবাসনের রক্ষণাবেক্ষণের টাকা।
অন্য আবাসিকরা জানিয়েছএন, ব্লক ৫-এ ফ্ল্যাটে নিয়মিত আসতেন অর্পিতা। আর অন্য ব্লকের ফ্ল্যাটটিকে গেস্ট হাউজ করার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। কিন্তু আবাসনের মধ্যে গেস্ট হাউজ তৈরির বিষয়টিতে অনুমতি ছিল না বাকি আবাসিকদের।
সেই পরিকল্পনা তাই বাস্তবায়িত হয়নি। এক প্রতিবেশীর কথায়, এ ভাবে এখানে টাকার পাহাড় তৈরি হয়েছে, সে কথা আন্দাজও করতে পারেননি তাঁরা। নিতান্ত ছিমছাম এলাকায় অপরাধও তেমন নেই, তার মধ্যেই অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে এই বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার সবার নজরে এনে ফেলেছে এই আবাসনকে।
তাই এক কথায় হতবাক হয়ে রয়েছেন এঁরা। সকাল থেকেই পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী ও ইডি অফিসারদের আনাগোনা। শেষ কয়েকদিন ধরে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার আলো দেখতে দেখতে কেমন যেন অচেনা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের পরিবেশ। আর এখন সেই নাটকের শেষ অঙ্কের পালা যেন চলছে। তাহলে কি উদ্ধার হওয়া টাকার অঙ্ক ছাড়িয়ে যাবে টালিগঞ্জে পাওয়া অর্থের পাহাড় কেও, সেদিকেই এখন নজর রয়েছে ৷