টিভি 20 বাংলা ডেস্ক :- সমাজ গঠনের দৈনন্দিন পরিস্থিাতির সঙ্গে সম্পৃক্ততারয় এবং নিরন্তর তার বস্তনিষ্টা উপস্থাপনায় সংবাপত্র শক্তিশালী হলো গণমাধ্যম। জনমতের প্রতিফলনে ও জনমত গঠনে সংবাদপত্র পালন করে শক্তিশালী ভূমিকা, গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় বহু দল ও মতের ধারক- বাহক হিসেবে সংবাদপত্র সরকার ও জনগণের মধ্যে এক মেলবন্ধনের সেতুবন্ধন রচনা করে থাকে । সংবাদপত্র যুক্তি ও বিভিন্ন তথ্যনির্ভরের ওপর আলোচনা প্রকাশ করে পাঠকের নিজস্ব অভিমত গঠনে ভূমিকা রাখে।সংবাদপত্র সরকারের জনকল্যাণকর পদক্ষেপকে সমর্থন ও গণবিরোধী নীতির সমালোচনার মাধ্যমে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অতএব জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে সংবাদপত্র পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কতখানি তা অপরিহার্য। সংবাদপত্র পড়ার উপকারিতা নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। বিশ্বের ঘটে চলা সব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী হল সংবাদপত্র।
সংবাদ পত্র পড়ার মধ্য দিয়ে আমরা জানতে পারি আগামী দিনের আবহাওয়া,জানতে পারি বিভিন্ন দেশের নতুন নতুন আবিষ্কার,জানতে পারি আমাদের গণতান্ত্রিক দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব রাজনৈতিক খবর। আমাদের দেশে সাধারণ মানুষদের মধ্যে জনমত গঠনে সংবাদপত্র কতখানি সক্ষম? সেই সংবাদপত্রের ভূমিকা নিয়েই আজকের বিষয় অতীতের ইউরোপের রোমান সাম্রাজ্যে বিভিন্ন বার্তা মানুষের মধ্যে প্রচার ও প্রেরণের উদ্দেশ্যে পাথরের ফলকে লিখে রাজপথের বিভিন্ন দেয়ালে টাঙিয়ে দেওয়া হত। মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে সুলতানি যুগে বিভিন্ন রাজনৈতিক নির্দেশনামা প্রচারের উদ্দেশ্যেও এই ধরনের পত্রের প্রচলন ছিল। এরপর ভারতবর্ষে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন কালে সপ্তদশ শতাব্দী শেষ লগ্নে ১৭৮০ সালে জেমস হিকির হাত ধরে শুরু হয় ভারতবর্ষের প্রথম পত্রিকা বেঙ্গল গেজেট।
জনমত গঠনে সমাজ সচেতনার প্রসারে বর্তমান যুগের সংবাদমাধ্যম ও সংবাদপত্রের গুরুত্ব
যেমন ইন্ডিয়া গেজেট(১৭৮০),বেঙ্গল জার্নাল(১৭৮৫ খ্রিঃ), দি ক্যালকাটা ক্রনিকল (১৭৮৬), ক্যালকাটা কুরিয়র (১৭৯৫),ইন্ডিয়া অ্যাপেলো (১৭৯৫),বেঙ্গল হরকরা(১৭৯৮) ইত্যাদি। তারপর আধুনিক ভারতের জনক রাজা রামমোহন রায় অষ্টাদশ শতাব্দীর ৪ ঠা ডিসেম্বর ১৮২১ সালে শুরু করেন সম্বাদ কৌমুদী নামক বাংলা পত্রিকা। এর পরবর্তী কাল থেকেই ভারতবর্ষে নানান সংবাদপত্রের গৌরবের যুগ শুরু হয়ে যায়। বর্তমান যুগের সংবাদপত্রের সঙ্গে ভারতবর্ষের শুরু হওয়া প্রথম সংবাদপত্রটির ন্যূনতম মিলও খুঁজে পাওয়া যায় না। আধুনিক যুগে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক বিশ্বায়নের ছোঁয়া থেকে রেহাই পায়নি সংবাদমাধ্যমও। বিশ্বায়নের সেই অমোঘ নিয়ম অনুযায়ী বিবর্তিত হয়েছে হয়েছে সংবাদপত্রগুলিকেও।
আধুনিক সংবাদপত্রের প্রতিটি ছত্রে ছত্রে সেই বিবর্তনের ছোঁয়া। বর্তমান সংবাদপত্রের পাতায় পাতায় খবরের সাথে সাথে তাই চোখে পড়ে রংবেরঙের বিজ্ঞাপন; নির্ভেজাল ও পক্ষপাতহীনভাবে সত্য তুলে ধরার নীতি থেকে সরে এসে তাই বিভিন্ন সংবাদপত্রে ঘটনার তুলনায় রটনা বেশি প্রাধান্য পায়। তাছাড়া এখনো বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদপত্র ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে পুরোপুরিভাবে বেরিয়ে আসতে পারেনি। সংবাদপত্রগুলিতে পেশ করা খবরে তার প্রভাব বিশেষভাবে চোখে পড়ে। সেজন্যে আকারে ও বহরে বেড়ে গেলেও মানের দিক থেকে তুলনা করলে বর্তমান যুগের অধিকাংশ সংবাদপত্রই পূর্বতন আদর্শ সংবাদপত্রগুলির তুলনায় নিম্নমানের।
শিক্ষিত মানুষ মাত্রই আমরা সকলেই জানি বর্তমান যুগের বহুল প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থা । আমাদের গণতন্ত্রের মোট তিনটি প্রধান স্তম্ভ। প্রথমটি হলো আইন বিভাগ, দ্বিতীয়টি শাসন বিভাগ এবং তৃতীয়টি বিচার বিভাগ। এই তিনটি বিভাগের মধ্যে পারস্পারিক কর্মসামঞ্জস্য ও সহযোগিতার মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। তবে বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ক্ষমতা বা শক্তির মূল প্রতিভূত হলো জনগণ । উপরিউক্ত এই তিনটি বিভাগ দ্বারা তাদের কাছাকাছি পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন হয় আরো একটি অনন্যসাধারণ তাৎপর্যপূর্ণ মাধ্যম সেটি হল সংবাদমাধ্যম । গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শক্তির প্রধান উৎস সাধারণ জনগণের সঙ্গে নির্বাচিত শাসকগোষ্ঠীর সংযোগ রক্ষা করে বলেই হয়তো একে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়ে থাকে।
বর্তমান যুগে সংবাদ মাধ্যম বলতে বিভিন্ন ধরনের মাধ্যমকে বোঝানো হয়ে থাকলেও
বর্তমান যুগে সংবাদ মাধ্যম বলতে বিভিন্ন ধরনের মাধ্যমকে বোঝানো হয়ে থাকলেও, এর আবির্ভাব লগ্নে প্রাথমিকভাবে সংবাদমাধ্যম বলতে মানুষ সংবাদপত্রকেই বুঝত। বর্তমান যুগে বিশ্বব্যাপী মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে সংবাদমাধ্যম তথা সংবাদপত্রের ভূমিকা সমাজে যেমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তেমনই এই অস্থির সময়ে দাঁড়িয়ে একটি আদর্শ সংবাদপত্রের সংজ্ঞা নিরূপণ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কর্তব্য হয়ে পড়েছে। কারন বিশ্বব্যাপী সকল মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ জনিত অবক্ষয় থেকে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভও রক্ষা পায়নি। সংবাদপত্রকে বর্তমানে বিভিন্ন রঙিন চশমা দিয়ে দেখলেও সংবাদমাধ্যমের প্রকৃত রূপ আসলে সাদাকালো। বিশ্বব্যাপী সকল পরিসরে যে সমস্ত ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে, সাধারণ মানুষের কাছে নির্ভেজাল এবং পক্ষপাতহীনভাবে উপস্থাপন করায় সংবাদপত্রের আদর্শ ও কর্তব্য। ঘটনার মধ্যে কোনটি ঠিক কিংবা কোনটি ভুল তা বিচার করা সংবাদপত্রের কাজ নয়। যে ঘটনা যেমনভাবে ঘটেছে ঠিক তেমন ভাবে তাকে জনমানুষের কাছে উত্থাপন করাই সংবাদপত্রের কাজ।
একজন সাংবাদিক বহু পরিশ্রম করে খবরের সত্যতা যাচাই করে খবর সংগ্রহ করে। সেটি বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে প্রিন্ট করে পৌঁছে যায় পাঠক পাঠিকাদের হাতে। সকালে সযত্নে গ্রহন করার পর পরেরদিন সকালে পৌঁছে যায় ডাস্টবিনে।এমন কি খবর কাগজ বিছিয়ে বসা,কাঁচ পরিষ্কার,বোতল পরিষ্কার, ঠোঙা করে খাবার খাওয়া,খাওয়ার টেবিলে সেই খবরের কাগজকে মাড়ানো হয় । যে খবরের কাগজ শিক্ষা সংস্কৃতির মেরুদন্ড । সেই খবরের কাগজ আজ বর্তমান সমাজের মানুষের কাছে মূল্যহীন । সেই খবরের কাগজের মধ্যে যে অমূল্য সম্পদ ভরা রয়েছে তা কিন্তু আমরা জানিনা । সেইসব ফেলে দেওয়া খবরের কাগজ সংগ্রহ করে কাগজের মধ্য থেকে মূল তথ্য গুলি তুলে ধরতে চেয়ে জনসমক্ষে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনী প্রকাশ করেছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার খেজুরি থানার উত্তর কলমদান গ্রামের মধুসূদন জানা ।
খবর কাগজের মধ্যে যে সব তথ্য থাকে তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা যায় সংরক্ষণের মাধ্যমে।
পৌরসভা নির্বাচনের আগে সোনামুখীতে বড় ধাক্কা বিজেপির
খবর কাগজের মধ্যে যে সব তথ্য থাকে তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা যায় সংরক্ষণের মাধ্যমে। এই সংরক্ষণ নিয়ে তিনি তার কর্মজীবনে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে এই খবরের কাগজ সংরক্ষণ নিয়ে একটি প্রোজেক্ট তৈরি করেছেন । তার প্রোজেক্টির নাম “অমূল্য সম্পদে ভরা খবরের কাগজ”। তবে তার প্রোজেক্টির মূল উদ্দেশ্য , সংবাদের মূল্য,সাংবাদিকের মূল্য এবং সর্বোপরি খবর কাগজের মূল্য কতখানি তিনি সেই বিষয়ে বর্তমান সমাজের কাছে বোঝানোর চেষ্টা করছেন । উনি উনার প্রোজেক্টে স্বাধীনভারতের ৭০_৮০বছরের খবর কাগজের তথ্যচিত্র সংগ্রহ করেছেন তিনি ৫২ রকমের পত্র পত্রিকার সংবাদ সংগ্রহ করে ফেলেছেন। শুধু তাই নয় তিনি ১০ টি ভাষায় পত্র পত্রিকার উপরও কাজ করেছেন ।
তিনি যে সমস্ত তথ্যচিত্র ইতিমধ্যে সংগ্রহ করেছেন তার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ্য হল_ ১.জওহরলাল নেহেরুর প্রথম পতকা উত্তলোনের তথ্যচিত্র। ২.মহাত্মা গান্ধীর শেষ অনশন ও অসহযোগ আন্দোলনের বৈঠকের তথ্যচিত্র । ৩.১৮৭৪ সালে কলকাতা দৃশ্যের তথ্যচিত্র। ৪.কলকাতাতে যেদিন প্রথম ট্রাম চলে তার তথ্যচিত্র। ৫.১৯৫০ সালে প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবেসর তথ্যচিত্র। ৬.ক্ষুদিরামের ফাঁসির স্থলের তথ্যচিত্র। ৭.১৯১২ সালে টাইটানিক দৃশ্যের তথ্যচিত্র। ইত্যাদি। এই রকমের প্রায় ৯০০টি তথ্য সংরক্ষণ করে ফেলেছেন। এবং সেইসব তথ্য চিত্র সংবাদপত্র থেকে সংরক্ষন করে, B4 সাইজের কাগজের উপর খবর কাগজ মাড়িয়ে ল্যামিনেশান করে সেগুলি জেলার বিভিন্ন মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি তার এই তথ্য চিত্র গুলি মানুষের কাছে প্রদর্শনী প্রকাশ করে থাকেন । তিনি বর্তমান যুগের সংবামাধ্যম ও নিউজ মিডিয়া চ্যানেলগুলোতে আবেদন করেছেন, যাতে এই বিষয়টি সম্প্রচারে আসে সমাজের বুকে।
মেহেবুব মাসুমের প্রতিবেদন