বাঘাযতীনে ভেঙে পড়লো ফ্ল্যাট
‘অবৈধ’ শব্দটা এখন বেশ আভিধানিক হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় গৃহ নির্মাণ শিল্পে আর কোনো ‘বৈধ’ শব্দ নেই। মাত্র ১১ বছর আগে জলা ডোবা বুজিয়ে ফ্ল্যাট বানিয়ে কোটি টাকা রোজগার করলো স্থানীয় প্রমোটার। গার্ডেনরিচের পর বাঘাযতীন। আস্ত একটা গোটা আবাসন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। অভিঘাতে পাশের দুটো আবাসনও হেলে পড়েছে। কেন ভেঙে পড়ল, তা নিয়েই উঠছে বিস্তর প্রশ্ন। স্থানীয় মানুষেরা বলছেন, ওটা ছিল জলা জমি। তার চরিত্র পাল্টে করা হয়েছে বাস্তু জমি। সহজেই অনুমেয় এর সঙ্গে যুক্ত পৌর প্রতিনিধি, পৌরসভা, বি এল আর ও অফিস থেকে শুরু করে অনেকেই।
ওই অঞ্চলের কাউন্সিলার মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায় আসতেই স্থানীয় মানুষ তাকে চেপে ধরে। সংবাফদিকদের দেখে কিছুটা ঘাবড়ে তিনি বলেন, “৮-১০ বছর আগেকার বাড়ি। আমি ওনারদের থেকে যা শুনলাম, বাড়ির ধার দিয়ে জল নামছিল। যাঁরা নির্মাণের কাজ করেছিলেন, তাঁদেরকে ডেকেও ছিলেন তিনি । প্রোমোটার তাঁদের আশ্বস্ত করেছিলেন বাড়ি ছাড়তে। আমরা ঠিক করে দেব। বিল্ডিংয়ে ফাটল ধরেছে বলেও শুনলাম। তারপর লোহার ট্র্যাক দিয়ে উঁচু করা হচ্ছিল। তখন আমি খবর পেয়েই যাই। সেই কাজে বাধা দিই।” প্রশ্ন, কী করে ওই অবৈধ নির্মাণ হলো। পাশের বাড়ি থেকে ঠিক দেড় হাত দূরত্বেই এই বাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ২০ বছর আগে এখানে একটি খাল ছিল। সেই খালটিকে বোজানো হয়েছে। তারপর এই আবাসন নির্মীত হয়। অভিযোগ, মাটি বোজানোর ক্ষেত্রে সঠিক উপায় অবলম্বন করা হয়নি।
এলাকারই বেডিং স্টোর্সের মালিক তাপস সাহা এই জলা জমির ওপরেই আবাসনটি নির্মাণ করেন বলে জানা যাচ্ছে। ওই আবাসনের এক বাসিন্দা শিউলি বলেন, “আমি তো ভাড়া বাড়িতে ছিলাম। পাশের বাড়ির বৌদি ফোন করে আমাদের ডেকে আনেন। শনিবার লিফটিং করেছেন। দু-তিন দিন কাজ বন্ধ ছিল।” হতাশায় ভেঙে পড়েছেন এক প্রৌঢ়। বললেন, “মাথার ওপরের ছাদটাই তো চলে গেল। এখন বুঝতে পারছি না কী হবে। ফ্ল্যাট তো বহুদিন আগেই কেনা হয়ে গিয়েছে। সব টাকা জলে গেল!” এখন শুধুই চোখের জল।

