গ্রাম বাংলায় মাটি পরীক্ষা করে চাষ করার অভ্যাস প্রায় নেই বললেই চলে। কারণ কৃষকদের ইচ্ছা থাকলেও মাটি পরীক্ষার সুযোগ বেশ কম। ফলে প্রথাগত ভাবে একই ধরণের বীজ, সার ও কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করে চাষ করার ফলে ধীরে ধীরে যেমন মাটির উর্বরা শক্তি কমে, তেমনই ফসলের উৎপাদনও কমতে থাকে। পাশাপাশি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আজ একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই মাটির উপাদানগুলির পরিবর্তন ঘটে, যেটা একমাত্র মাটি পরীক্ষার ফলেই জানা সম্ভব। কিন্তু পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাটরা গ্রামের কৃষকরা রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে চাষ করে অনেকটাই লাভের মুখ দেখেছেন। আজ আমরা শোনাবো এমনই এক মহিলা কৃষকের সাফল্যের উদাহরণ।
সুপর্ণা পাল (৩৮), পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাটরা গ্রামের মহিলা কৃষক। বর্তমানে সুপর্ণা তাঁর পরিবারের একমাত্র সদস্য। জীবিকা একমাত্র ১.৫ বিঘা লিজ জমিতে সবজি চাষ। মূল ফসল লঙ্কা, শশা, মটরশুটি ইত্যাদি। পাশাপাশি রয়েছে ছাগল পালন। কিন্তু পরিশ্রম ও পুঁজি বিনিয়োগের তুলনায় ফসলের উৎপাদন আহামরি কিছু না। কারণ মাটির লবনাক্ত ভাব। এমতাবস্থায় রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গত বছর ভাটরা গ্রামে ইফকোর সহায়তায় আয়োজন করা হয় মাটি পরীক্ষা শিবির। সুপর্ণাও এই শিবিরের একজন উপভোক্তা। মাটি পরীক্ষা শিবির থেকে সুপর্ণা মাটির স্বাস্থ্য কার্ড পান এবং রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের কর্মীদের মাধ্যমে সার এর পরিমান ও প্রয়োগপদ্ধতির পরিবর্তন ঘটান। আগে যেখানে গড়ে বিঘা প্রতি ৭৫ কেজি ১০২৬ সার লাগতো, মাটি পরীক্ষার পরে সারের পরিমান ৫৫-৬০ কেজি গড়ে প্রতি বিঘা।
অর্থাৎ প্রায় ২৭% উৎপাদণ খরচ কমেছে। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞের সুপারিশমতো জমিতে গোবরসার ব্যবহার ও লবনাক্ত ভাব কাটানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে চুন প্রয়োগ করে ফসলের গুণমান বাড়ানোর পাশাপাশি উৎপাদণ বৃদ্ধিতেও সক্ষম হয়েছেন। ফলস্বরূপ, আগে যেখানে শসার উৎপাদন হতো ১২ কুইন্টাল, সেখানে এ বছর উৎপাদনের পরিমান প্রায় ১৫ কুইন্টাল, অর্থাৎ শতাংশের হরে শসার উৎপাদন বৃদ্ধি প্রায় ২৫%। মাটি পরীক্ষা শিবির থেকে উপকৃত সুপর্ণা আজ গ্রামের অন্য মহিলা কিষান তথা স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যের মধ্যেও মাটি পরীক্ষা করে চাষের গুরুত্ব বোঝানোর গুরুদায়িত্ব পালন করছে। রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন পরিবার লড়াকু মহিলা কিষান সুপর্ণার এই প্রচেষ্টা ও উদ্যমকে কুর্নিশ জানায়।