উজ্জ্বল সরকার :- প্রায় ৫০ দিন পর আরব সাগরের তীর থেকে ধরা হলো ক্যানিংয়ের তিন তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনার মূল মাষ্টার মাইন্ডকে ধরলো
সাগরের সমুদ্রতটে বালুর উপর দিয়ে ছুটছে এক আসামি। সঙ্গে প্রায় জনা দশেক পুলিশ কর্মী।তার মধ্যে লুঙ্গি পরে দ্রততার সাথে দৌড়াচ্ছে বাংলা তথা ক্যানিংয়ের পাঁচজন জাঁদরেল পুলিশ অফিসার। কেরালা, তামিল আর বাংলা ভাষা মিলিয়ে কথোপকথন চলছে পুলিশ কর্মীদের মধ্যে। বারবার থামতে বলা হচ্ছে ছুটতে থাকা আসামিকে। কিন্তু আসামিও প্রাণ ভয়ে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটে চলেছে বাঁচার তাগিদে। আসামিকে ভয় দেখাতে শূন্যে ছোড়া হলো দুই রাউন্ড গুলিও। তবুও অকুতোভয় সে,অনবরত ছুটে চলেছে পুলিশের হাতে ধরা না দেওয়ার জন্য। এইভাবে চলতে চলতে কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পর অবশেষে আসামিকে ধরে ফেললো পুলিশ। এতক্ষণ শোনার পরে মনে হতে পারে কোন হিন্দি বা তামিল সিনেমার দুর্ধর্ষ কোন সুটিং পর্বের কথা। কিন্তু একেবারেই সিনেমার কোন দৃশ্য নয়। বাস্তব ঘটনা।খুনের আসামীকে ধরতেই পুলিশ আসামীর পেছনে দৌড়ানোর বাস্তব চিত্র। যা হার মানিয়ে দেবে যে কোন হিন্দি সিনেমা চিত্রকে।
উল্লেখ্য গত ৭ জুলাই তারিখে ক্যানিং থানার গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পিয়ালী নদীর তীরবর্তী ধর্মতলার পিয়ারের পার্ক এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব চলে। খুন হয় গোপালপুর পঞ্চায়েত সদস্য তথা তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি স্বপন মাঝি ও তৃণমূল কর্মী ঝন্টু হালদার,ভূতনাথ প্রামনিকরা।
এলাকায় যথেষ্ট সুনামের সঙ্গে কাজ করছিলেন নিহত স্বপন মাঝি । আর তাতেই চক্ষুশূল হয়ে ওঠে এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতী রফিকুল সরদার ও তার দলবলের। তাই তারা একেবারে দিন দুপুরে খুনের পরিকল্পনা করে। নৃশংসভাবে প্রথমে গুলি করে পরে গলা কেটে খুন করা হয়। এই ঘটনায় পরপরই পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছিল জয়নগর ও ক্যানিং থেকে। মূল অভিযুক্ত রফিকুল সরদার ছিল অধরা। তার খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি শুরু করে ক্যানিং থানার পুলিশ। আর তাতেই ধরা পড়ে যায় রফিকুল। কেরালার কোঝিকোডে শহরের একেবারে সমুদ্র লাগোয়া একটি বস্তি এলাকা থেকেই বৃহস্পতিবার রাতে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুরো এই অপারেশনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তদন্তকারী দলের ক্যানিং থানার অফিসার রঞ্জিত চক্রবর্তী।গত ২৩ আগষ্ট ক্যানিং থানার পুলিশ অফিসার রঞ্জিত চক্রবর্তীর নেতৃত্ব পাঁচ সদস্যের এক বিশেষ পুলিশ টীম কেরালার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। প্রথমে এই তদন্তকারী অফিসাররা কেরালাতে গিয়ে যে এলাকায় রফিকুল ছিল সেই কোঝিকোডে এলাকাটিতে লুঙ্গি পরে ছদ্মবেশে অনুসন্ধান চালায়। কারণ রফিকুল ওই এলাকায় রংমিস্ত্রি হিসেবে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছিল। তার সঙ্গে ছিল জয়নগর ও বাসন্তীর আরো বেশ কিছু দিনমজুর। একসঙ্গেই থাকছিল তারা। পরিচয় গোপন করে রফিকুল সেখানে কাজ নেয়।রফিকুল কে চিনতে অসুবিধা হচ্ছিল তদন্তকারী অফিসারদের। কারণ তার মুখে কোন দাড়ি ছিলোনা। কেরালাতে গিয়ে দাড়ি রাখে সে।রফিকুলের সঠিক নিশানা পেতে কয়েকদিন কেটে যায়। যদিও চোখে চোখে রাখছিলেন পুলিশ অফিসাররা।ঘটনার যবনিকা হয় বৃহষ্পতিবার রাতে। তদন্তকারী অফিসাররা সিদ্ধান্ত নেন আর দেরি করার প্রয়োজন নেই। ফলে ওই দিন রাত ১২ টা নাগাদ ক্যানিং থানার পুলিশ ক্যানিং খুনের ঘটনার মূল মাষ্টার মাইন্ড অভিযুক্ত রফিকুল কে ধরার জন্য অপারেশন শুরু করে।তাদেরকে সাহায্য করে কেরালা পুলিশের কর্মীরাও।
হিন্দি সিনেমার কায়দায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ইতিমধ্যেই রফিকুল কে কেরালার আদালতে তুলে তারপর ট্রানজিট রিমান্ডে আনা হবে ক্যানিংয়ে। পুলিশের জেরাতে ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছে খুনের কথা অভিযুক্ত। তবে এর পেছনে রাজনৈতিক যোগ আছে কিনা এবং কে তাকে খুনের বরাত দিয়েছিল সবটাই জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। এ বিষয়ে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মকসুদ হাসান বলেন, কেরালা থেকে খুব শীঘ্রই তাকে ট্রানজেট রিমান্ডে আনা হবে বারুইপুর পুলিশ জেলাতে। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
উল্লেখ্য খুনের কয়েকদিন পরে এলাকা থেকে পালিয়ে গা ঢাকা দেয় রফিকুল ও তার দলবল। পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালালেও তার খোঁজ পাচ্ছিল না। অবশেষে কেরালার কোঝিকোডে এলাকা থেকেই মিললো বড় ধরনের সাফল্য।