TV20 Bangla- কলকাতা : প্রয়াত হলেন এক টাকার ডাক্তারবাবু। মঙ্গলবার সকালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কাজের শেষে একদিন বাড়ি ফিরছিলেন। দেখতে পান রাস্তার পাশে গরিব মানুষেরা গামছা পেতে বসে মুড়ি খাচ্ছে। সাধারণ মানুষের এই অসহায়তা দেখে প্রতিজ্ঞা করলেন তিনি এক টাকায় সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করবেন। তাঁর কাজের ভাবনা যেমন, প্রতিফলনও ঠিক তেমন। গত পাঁচ দশকেও সেই টাকার পরিমাণ কখনো বাড়েনি।
কখনো কি মনে হয়নি সামান্য কিছু হলেও বাড়ানো দরকার? তার উত্তর,”যখন দেখি গরীব মানুষেরা গামছা পেতে বসে মুড়ি খাচ্ছে, তখন এর থেকে বেশি টাকা নেওয়ার কথা ভাবতে পারি না।” হ্যাঁ তিনিই হলেন ডক্টর সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন পুরুষ ধরে বোলপুরে সুশোভন বাবুদের বাস। বাবা বিনয় কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন গোয়েন্দা দপ্তরের কর্মী। মনিমালা বন্দ্যোপাধ্যায় গৃহবধূ। সুশোভন বাবুর স্ত্রী ছায়া বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় ব্যস্ত থাকতেন সংসার নিয়ে। তাদের মেয়ে জামাই দুজনেই চিকিৎসক।
১৯৬২ সালে সুশোভন বাবু এমবিবিএস পরীক্ষায় পাস করেন। ১৯৬৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হেমাটোলজি নিয়ে ডিএসসি ডিগ্রী অর্জন করেন এবং তিনি গোল্ড মেডেলিস্ট হন। কেরিয়ারের গোড়ায় শেফিল্ডের সিনিয়র রেজিস্টার এবং সিনিয়র ইনচার্জ ছিলেন তিনি। তখন তার বার্ষিক বেতন ছিল ১৬ হাজার পাউন্ড। তাক লাগানো সেই চাকরি ছেড়ে বিশ্বভারতীতে যোগদান করেন ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার হিসাবে।
মাত্র এক টাকায় ডাক্তারবাবুর চিকিৎসা। ডঃ সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়।
সাসপেন্ড হলেন সাতজন তৃনমূল সহ ১৯ জন সাংসদ ।
সেটাও এক সময় ছেড়ে দিয়ে গ্রামের অসহায় মানুষের জন্য চেম্বার খুলে বসেন শেষ পর্যন্ত নিজের বাড়িতে। ফিস নেন মাত্র এক টাকা। আর একমাত্র মেয়ে মন্দিরা ও ডাক্তার। থাকেন কলকাতায়। মেয়ে বাবাকে কলকাতায় নিয়ে যেতে চাইলেও এক টাকার ডাক্তারি করা মানুষটি বোলপুর ছেড়ে যেতে পারেনি।
ভাবতে অবাক লাগে ৫৭ বছর ধরে তিনি প্রায় কুড়ি লক্ষ রোগী দেখেছেন এবং এক টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা করার স্বীকৃতি হিসেবে বোলপুরের ডাক্তার সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উঠেছে গিনেস বুকে। তিনি পদ্মভূষণ পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন। ডাক্তার সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম জ্বলজ্বল করছে বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এর তালিকায়। চিকিৎসক কে? একজন বিপন্ন মানুষের হাত যিনি ধরেন, তিনিই তো চিকিৎসক। সেই হাত ছাড়ানো যায় না কখনোই।”
এটাই আদর্শ কৃতিত্ব ডঃ সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আর সেই আদর্শের ভরসাতেই প্রতিদিন ভিড় জমে বোলপুরের হরগৌড়ি তলায় তার হলুদ রঙের দোতলা বাড়িটার সামনে। যখনই সেখানে যাওয়া হয় তখনই সেখানে অগণিত মানুষের ভিড় চোখে পড়ে। সবাই একটা কথাই বলেন, “ভগবানের দরজা কখনো বন্ধ থাকে না। অন্যান্য জায়গায় সবাইকে ফিরিয়ে দিলেও, এখান থেকে চিকিৎসা না পেয়ে কখনোই ফিরতে হয় না কাউকে।”
আর ডাঃ সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,”আমি অভিভূত, আর কি বলব? এক টাকায় রোগী দেখি। এটুকুই তো করেছি।”
সমাজসেবক ডাক্তারবাবুর প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা রইল। আমরা ওনার আত্মার শান্তি কামনা করি।